দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি)।
সংস্থাটি বলছে, দেশ পরিচালনা করেন রাজনীতিবিদরা। অথচ এবার নির্বাচনে পেশায় রাজনীতিবিদ এমন প্রার্থী মাত্র ২ দশমিক ৮৬ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি প্রার্থী ব্যবসায়ী।
মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর ধানমন্ডির কার্যালয়ে ‘নির্বাচনী হলফনামায় তথ্যচিত্র, জনগণকে কী বার্তা দিচ্ছে?’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দেশে ব্যবসা, রাজনীতি, ক্ষমতা একাকার হয়ে গেছে। যেটা রাজনীতি সেটাই ব্যবসা, যেটা ব্যবসা সেটাই রাজনীতি হয়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা রাজনীতিতে আসবেন এটা দোষের কিছু নয়। কিন্তু একজন ব্যবসায়ী যখন রাজনীতিকে তার ব্যবসা সম্প্রসারণে ব্যবহার করেন সেটাই উদ্বেগের জায়গা।
হলফনামায় প্রকাশিত প্রার্থীদের সম্পদের অস্বাভাবিক তথ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেন টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন ও মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল।
তিনি বলেন, একসময় রাজনীতিবিদদের সম্পদের পরিমাণ কমত। এখন উল্টোটা হয়। সম্পদ বাড়াতে রাজনীতিতে আসেন। রাজনীতিতে আসার পর তাদের সম্পদ হুঁ হুঁ করে বাড়ে। এখন একটা ভাষা শিখেছি, নিউ নরলাম। বাংলাদেশে এটাই নিউ নরমাল যে, কিছু মানুষ একেবারে হাজার হাজার কোটি টাকার উপরে থাকবে, আর কিছু মানুষ প্রতিদিন কীভাবে দিন চালাবে সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকবে।
প্রার্থীদের সম্পদের পাহাড় প্রসঙ্গে সুলতানা কামাল বলেন, আমরা দুটি সমাজ তৈরি করছি। একটা সমাজ সম্পদশালী, আরেকটা দিনে আনে দিন খায়। অনেক সময় সেটাও সম্ভব হচ্ছে না। এটা দেখতে দেখতে ভাবছিলাম, এটা কী করে সম্ভব!
তিনি বলেন, এটা তো আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপার ছিল না। এটা আমাদের প্রতিজ্ঞা, অঙ্গীকার ছিল না। আমাদের সাম্যের অঙ্গীকার ছিল। এত অল্প সময়ের মধ্যে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক কীভাবে হওয়া সম্ভব? একটা অসম সমাজ আমরা তৈরি করেছি।
সুলতানা কামাল বলেন, হলফনামায় যে তথ্যগুলো এসেছে তার মাধ্যমে এ বার্তা যাচ্ছে যে, শাসকগোষ্ঠী ক্রমশ মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি বলে যে দল নিজেদের দাবি করছে, তাদের হাতে যখন দেশ, তখন আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কত বাইরে কাজ করছি! কত বাইরে এক একেকটি বিষয় চলছে। যেখানে আমাদের প্রতিনিধিত্ব যারা করছেন, তারা আমাদের কী অবস্থায় নিয়ে যাচ্ছেন সেটার একটা বার্তা দেখতে পাচ্ছি। সেটা খুব সুখকর বার্তা নয়।
প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ করে টিআইবি জানায়, এবারের জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন ১ হাজার ৮৯৬ জন প্রার্থী। তাদের মধ্যে ১৬৪ প্রার্থীরই বার্ষিক আয় ১ কোটি টাকার ওপরে। আর ১০০ কোটির টাকার বেশি সম্পদের মালিক ১৮ জন। গত ১৫ বছরে কারও কারও সম্পদ কয়েক হাজার গুণ বেড়েছে।