এক ব্যবসায়ীর কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে করা মামলায় নরসিংদী সদর উপজেলার নুরালাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আরিফ হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার রাত ১১টার দিকে নুরালাপুরের নিজ বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে মাধবদী থানার পুলিশ। আজ রোববার দুপুরে তাঁকে নরসিংদীর আদালতে পাঠানো হয়েছে।
মাধবদী থানা সূত্রে জানা যায়, গত ২২ জুন নুরালাপুরের টেক্সটাইল ব্যবসায়ী মো. আইনুল হকের দেওয়া একটি লিখিত অভিযোগ আদালতের নির্দেশে মামলা হিসেবে নেওয়া হয়। ওই মামলার প্রধান আসামি নুরালাপুরের ইউপি চেয়ারম্যান আরিফ হোসেন। অন্য আসামিরা হলেন—আরিফ হোসেনের কর্মী মো. আশিক (৩০), রহম আলী (৩৬), মজিবুর রহমান (২৭) ও মো. সামাদ (২৫)। মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও পাঁচ থেকে ছয়জনকে। আসামিদের মধ্যে গতকাল রাতে ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার হয়েছেন। এর আগে এই মামলায় এজাহারভুক্ত আরেক আসামি রহম আলীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ব্যবসায়ী মো. আইনুল হক সম্প্রতি নিজ বাড়ির সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরু করেছিলেন। ১২ জুন বেলা ১১টার দিকে ইউপি চেয়ারম্যান আরিফ হোসেন অন্য আসামিদের নিয়ে ঘটনাস্থলে এসে নির্মাণকাজে বাধা দেন। এ সময় তিনি আইনুল হককে বলেন, ‘সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করতে চাইলে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দিতে হবে। টাকা রেডি রাখবেন, কালকে এসে নিয়ে যাব। টাকা না পেলে কাজ করতে দেওয়া হবে না।’ পরে আইনুলের হাত কেটে ফেলার হুমকি দিয়ে দলবল নিয়ে চলে যান ওই চেয়ারম্যান।
পরদিন দুপুরে চাঁদার টাকা নেওয়ার জন্য ইউপি চেয়ারম্যান আরিফ হোসেনের নির্দেশে বাকি আসামিরা চারটি মোটরসাইকেলে ঘটনাস্থলে আসেন। তাঁরা আইনুলকে না পেয়ে হইহুল্লোড় শুরু করেন এবং রাজমিস্ত্রিদের ভয়ভীতি দেখিয়ে কাজ বন্ধ করে দেন। রাজমিস্ত্রিরা ওই সময় আসামিদের জানান, আইনুল হক তাঁদের কোনো চাঁদা দেবেন না বলে জানিয়েছেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে আশিক, রহম, মজিবুর, সামাদসহ অজ্ঞাত আসামিরা উপস্থিত রাজমিস্ত্রিদের উপর্যুপরি কিল-ঘুষি ও লাথি মারতে থাকেন। এ সময় রমজান ও উজ্জ্বল নামের দুই রাজমিস্ত্রিকে তাঁদের মোটরসাইকেলে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেন আসামিরা। শেষ পর্যন্ত স্থানীয় লোকজনের হস্তক্ষেপে তাঁদের দুজনকে সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেননি তাঁরা।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর ভাষ্য অনুযায়ী, চাঁদার টাকা না দেওয়ায় ১৯ জুন ভোর চারটার দিকে ব্যবসায়ী আইনুল হকের সুতার গুদামে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। ওই সময় আলাউদ্দীন নামের গুদামের একজন শ্রমিক শৌচাগারে যাওয়ার জন্য বাইরে বেরিয়ে দেখেন, আশিক, রহম আলী, মজিবুর, সামাদসহ অজ্ঞাতনামা আরও দুই থেকে তিনজন সেখানে অবস্থান করছেন। তাঁরা প্লাস্টিকের জার্কিন থেকে দাহ্যপদার্থ ছড়িয়ে দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে আগুন নেভান। অগ্নিকাণ্ডে সুতাসহ প্রায় এক কোটি টাকার মালামাল পুড়ে গেছে বলে দাবি ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর। এ ঘটনায় আশিক, রহম আলী, মজিবুর, সামাদসহ অজ্ঞাতনামা আরও দুই থেকে তিনজনকে আসামি করে আরেকটি মামলা করেছেন ব্যবসায়ী আইনুল হক।
মো. আইনুল হক প্রথম আলোকে বলেন, পরপর ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর বিচারের দাবিতে কয়েক দফা আসামিদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ নিয়ে থানা-পুলিশের কাছে গিয়েছেন। তারা লিখিত অভিযোগ মামলা হিসেবে নেয়নি। পরে বাধ্য হয়ে নরসিংদীর আদালতে সিআর মামলার আবেদন করেন। বিচারক মাধবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) মামলা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন। এরপরই মামলা নেয় পুলিশ। মামলার বাকি আসামিদেরও গ্রেপ্তারের দাবি জানান তিনি।
জানতে চাইলে মাধবদী থানার ওসি রকীবুজ্জামান বলেন, চাঁদাবাজির মামলার আসামি নুরালাপুরের ইউপি চেয়ারম্যান আরিফ হোসেনকে গতকাল রাতে গ্রেপ্তার করেছেন। এরই মধ্যে তাঁকে নরসিংদীর আদালতে পাঠানো হয়েছে। এই মামলায় এখন পর্যন্ত দুজন আসামি গ্রেপ্তার হয়েছেন। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
রোববার দুপুর ১২টার দিকে আরিফকে নরসিংদী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতের বিচারক ফারুফা আহাম্মেদের আদালতে তোলা হয়। এ সময় চেয়ারম্যান পক্ষের আইনজীবী আদালতে জামিনের আবেদন করেন। বিচারক বাদী-বিবাদী পক্ষের আইনজীবীদের যুক্তি তর্ক শুনে চেয়ারম্যানের জামিন মঞ্জুর করেন।
ক্ষতিগ্রস্ত হক টেক্সটাইল মালিক আইনাল হাজি বলেন, চেয়ারম্যান অন্যায়ভাবে আমার কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। আবার পাঁচ লাখ টাকা চাঁদাও দাবি করেছেন। এ ঘটনায় থানায় মামলা নিলো না। পরে আদালতে মামলা করলাম। এখন রাতে গ্রেফতার হলো সকালে আবার জামিন হয়ে গেলো। আমি সঠিক বিচার দাবি করছি।
জামিন পাওয়ার পর অভিযুক্ত চেয়ারম্যান আরিফ হোসেন বলেন, তিতাস গ্যাস অফিসের জি এম মাসুদের সঙ্গে আইনাল হাজিদের সীমানা নিয়ে বিরোধ চলছিল। বিরোধপূর্ণ জমিতে দেওয়াল নির্মাণ করছিলেন আইনাল। ইউনিয়ন পরিষদে তিতাস গ্যাস অফিসের জি এমের লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বাউন্ডারি ওয়ালের কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছি। এতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছেন। বিষয়গুলো আদালতে উপস্থাপনের পর বিচারক আমার জামিন মঞ্জুর করেছেন।
মাদবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, চাঁদাবাজির একটি মামলায় চেয়ারম্যান আরিফ হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। রোববার তাকে আদালতে পাঠালে বিচারক তার জামিন দেন।