নরসিংদীর পলাশে ঘরের ভিতরে ঢুকে বিনা মিত্র (১৮) নামে এক কলেজ ছাত্রীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। শনিবার (২৪ জুন) সকালে বুকে বিদ্ধ হয়ে থাকা ছুরিসহ বিবস্ত্র অবস্থায় ওই কলেজছাত্রীর লাশ উদ্ধার করে পলাশ থানা পুলিশ।
এর আগে শুক্রবার (২৩ জুন) রাতে উপজেলার জিনারদী ইউনিয়নের বড়িবাড়ি গ্রামে এ হত্যার ঘটনা ঘটে।
নিহত বিনা মিত্র (১৮) উপজেলার জিনারদী ইউনিয়নের বরাব (বড়িবাড়ি) গ্রামের মুকুঞ্জ মিত্রের মেয়ে ও ঘোড়াশাল মুসাবিন হাকিম ডিগ্রি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।
বিনা মিত্রের মা উর্মিলা মিত্র জানান, শুক্রবার সন্ধ্যার পর বাড়িসংলগ্ন বরাব মন্দিরে পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে রথযাত্রার প্রসাদ খেতে গিয়েছিলেন বিনা মিত্র। পরে বাড়িতে ফিরে নিজের ঘরে পড়াশোনা করতে বসেন। অন্যদিকে তাঁর মা উর্মিলা মিত্র কবিরাজি চিকিৎসা নিতে পাশের একটি বাড়িতে যান। রাত ৯টার পরে উর্মিলা মিত্র বাড়িতে ফিরে দেখেন ঘরে স্বামী আর ছেলে ঘুমাচ্ছেন। এ সময় অপর ঘরে গিয়ে দেখেন বুকে ছুরিবিদ্ধ অবস্থায় বিনার বিবস্ত্র লাশ পড়ে আছে।
ডাক-চিৎকারে প্রতিবেশী ও স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এসে থানায় খবর দেন। রাতেই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) অনির্বাণ চৌধুরী ও পলাশ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এমদাদুল হক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। সকালে পলাশ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সামসুল হক নিহত কলেজছাত্রীর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
পরিবারের সদস্যরা বলেন, ঘোড়াশাল পৌর এলাকার লাগালিয়া গ্রামের জগদিস মিত্রের ছেলে সঞ্জয় মিত্রের সঙ্গে বিনা মিত্রের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। দুই বছর আগে মা-বাবাকে না জানিয়ে সঞ্জয়কে বিয়ে করেন বিনা মিত্র। বিয়ের দেড় বছর শ্বশুরবাড়িতে থাকলেও পারিবারিক কলহের কারণে গত ছয় মাস ধরে বিনা তাঁর মা বাবার সঙ্গেই বসবাস করতেন। মাঝেমধ্যে স্বামী সঞ্জয় তাদের বাড়িতে আসা-যাওয়া করতেন। শুক্রবার রাত সোয়া ৯টার দিকে স্বামী সঞ্জয়কে ওই এলাকায় খালি পায়ে দ্রুত হেঁটে যেতে দেখেছেন নয়ন রায় নামের এক প্রতিবেশী। তাই মেয়ে হত্যায় সঞ্জয় মিত্রকেই সন্দেহ করছেন পরিবার। এই বিষয়ে জানতে সঞ্জয় মিত্রের মুঠোফোনে একাধিক বার কল দেওয়া হলে তা বন্ধ পাওয়া গেছে। তার বাড়িতে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
জিনারদী ইউপি সদস্য জয়ন্ত দাস বলেন, মৃত্যুর খবর পেয়ে গিয়ে দেখি মেয়েটির বুকে ছুরি বিদ্ধ হয়ে আছে। পড়নে সেলোয়ার নেই। ওই সময়ই ইউপি চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম গাজীকে ঘটনা জানালে তিনি পুলিশে খবর দেন। ঠিক কি কারণে তাকে এভাবে হত্যা করা হল, কেউ কিছু বুঝতে পারছেন না।
পলাশ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সামসুল হক বলেন, ওই কলেজছাত্রীকে ধর্ষণ করা হয়েছিল কিনা নিশ্চিত হতে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তবে তাঁর শরীরে-কাপড়ে জোরজবর ধস্তির কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তাঁর বুকের ওপরের অংশে ছুরিকাঘাতে মৃত্যু নিশ্চিত করে ছুরিটি বিদ্ধ অবস্থায় রেখেই পালিয়ে গেছে হত্যাকারী। ময়নাতদন্তের পরই এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে। এই ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।