জেলা সদরে স্বামীর তালাকের হুমকিতে হতাশাগ্রস্ত হয়ে একমাত্র সন্তান আয়ানুর রহমান আয়ানকে (৩) গলাকেটে হত্যার দায়ে মা সাবিনা ইয়াছমিন শিল্পীকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড দিয়েছে আদালত।
একই সঙ্গে ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদন্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রহিবুল ইসলাম এ রায় দেন।
লক্ষ্মীপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) জসিম উদ্দিন জানান, হত্যার ঘটনা স্বীকার করে আসামি আদালতের জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আদালতে প্রমাণিত হয়েছে। এজন্য আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছে। রায়ের সময় তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। ঘটনার দিন গ্রেপ্তারের পর থেকে তিনি কারাগারে ছিলেন।
দন্ডপ্রাপ্ত সাবিনা সদর উপজেলার পার্বতীনগর ইউনিয়নের মতলবপুর গ্রামের মৃত ছেরাজুল হকের মেয়ে ও লাহারকান্দি ইউনিয়নের চাঁদখালী গ্রামের সৌদি আরব প্রবাসী আজিমুর রহমান আজিমের স্ত্রী।
আদালত ও এজাহার সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর রাতে খাবার শেষে যে যার যার কক্ষে ঘুমাতে যায়। মধ্যরাতে হঠাৎ সাবিনার ঘর থেকে বৈদ্যুতিক পাখার বিকট শব্দ শোনা যায়। এতে সবাই ঘুম থেকে উঠে তার কক্ষের সামনে গিয়ে ডাকাডাকি করে। একপর্যায়ে বেড়ার ওপর দিয়ে দেখতে পাওয়া যায় সাবিনা গলায় ওড়না পেঁচিয়ে পাখার সঙ্গে ফাঁস দেয়ার চেষ্টা করছে। এসময় পাখার আঘাতে তার থুতনি কেটে যায়। আর খাটে আয়ানের রক্তাক্ত দেহ পড়ে রয়েছে। পরে দরজা ভেঙে সাবিনাকে আত্মহত্যার থেকে রক্ষা করা হয়।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে আয়ানের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। সাবিনাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। আয়ানের দাদা হুমায়ুন কবির বাদী হয়ে পরদিন সদর মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
আদালতে ১৬৪ ধারায় দেয়া সাবিনার বক্তব্যতে জানা যায়, ২০১৭ সালের চাঁদখালী গ্রামের আজিমের সঙ্গে সাবিনার বিয়ে হয়। বিয়ের এক বছরের মাথায় আজিম সৌদি আরব চলে যান। আয়ান তাদের একমাত্র সন্তান ছিল। ঘটনার আগের দিন তিনি বোনের বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এতে তাকে মাইজদি হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে বড় বোন আয়েশাও তার সঙ্গে আসে। চিকিৎসার জন্য সাবিনার শ্বশুর হুমায়ুন কবির ও শ্বাশুড়ি নাছিমা বেগমের কাছ থেকে কিছু টাকা চায় আয়েশা। কিন্তু তারা টাকা দেয়নি। এতে আয়েশা নিজের বাড়িতে চলে যান। এদিকে শ্বশুর-শ্বাশুড়ি ছেলেকে দিয়ে সাবিনাকে তালাক দেওয়াবে বলে হুমকি দেয়। আজিমও সৌদি থেকে শ্বশুর বাড়িতে ফোন দিয়ে সাবিনাকে তালাক দেবে বলে জানায়। এতে রান্নাঘর থেকে বটি নিয়ে ছেলেকে জবাই করে হত্যার পর নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করে। হতাশাগ্রস্ত থেকেই ঘটনাটি ঘটিয়েছেন বলে তিনি জবানবন্দি দেন।
২০২২ সালের ২ অক্টোবর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সোহেল মিয়া আদালতে সাবিনার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দায়ের করেন। দীর্ঘ শুনানি ও সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত আসামির যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছে।