বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩০ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে মোবাইল কোর্টের অভিযানে দুই প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা নরসিংদীতে প্রেট্রল পাম্পে জ্বালানি তেল পরিমাপে কারচুপি করায় জরিমানা ঢাবির জিয়া হল ডিবেটিং ক্লাবের নবনির্বাচিত সভাপ‌তি শিবপুরের পারভেজ মোশারফ শিবপুরে ১৫০ পিস ইয়াবাসহ বিএনপি নেতার ছেলে গ্রেফতার ভৈরবে বিএসটিআই এর মোবাইল কোর্ট পরিচালনা আধুনিকতার নামে আ.লীগ দেশকে জাহিলিয়াতের যুগে নিয়ে গেছে : মাসুদ সব ব্যানার ও ফেস্টুন অপসারণের নির্দেশ বিএনপির শিবপুরে ময়না বেকারীতে অবৈধভাবে বিএসটিআই’র লোগো ব্যবহার করায় জরিমানা রায়পুরা উপজেলায় ‘বিএসটিআই’ এর সার্ভিলেন্স অভিযান বিএসটিআই এর নরসিংদী আঞ্চলিক অফিস কর্তৃক সার্ভিলেন্স অভিযান পরিচালনা

এ. এন. এম. নূরুজ্জামান

মাসুদ খান
  • আপডেট সময় : শুক্রবার, ১২ জানুয়ারী, ২০২৪
  • ২৫২ বার পড়া হয়েছে

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ. এন. এম নূরুজ্জামান (১৯৩৮-১৯৯৩) সামরিক কর্মকর্তা ও মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। তিনি ১০ টি সাব-সেক্টর নিয়ে গঠিত ৩নং সেক্টরের ‘সেক্টর কমান্ডার’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার অসম সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ‘বীর উত্তম’ খেতাব প্রদান করে। ১৯৭৩ সালের গেজেট অনুযায়ী তার বীরত্বভূষণ নম্বর ১০।

জন্ম ও শিক্ষাজীবন
এ.এন.এম. নূরুজ্জামান ১৯৩৮ সালের ডিসেম্বর মাসে নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানাধীন সায়দাবাদ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবার নাম আবু আহাম্মদ এবং মায়ের নাম লুৎফুননেছা। বাবার চাকরি সূত্রে দেশের বিভিন্ন স্থানে তার শৈশব কেটেছে নূরুজ্জামানের। স্কুল জীবন কেটেছে মাদারীপুর ইসলামিয়া হাইস্কুল, কুমিল্লা ইউসুফ স্কুল, শেরপুর সরকারি ভিক্টোরিয়া একাডেমী ও সুনামগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে। সুনামগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং সিলেট এম.সি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৫৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ছাত্র জীবনে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এস.এম এ্যাথলেটিক সেক্রেটারী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৯ সালে ইতিহাসে অনার্সসহ স্নাতক পাস করেন।

কর্মজীবন
স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ছাত্রাবস্থায় তিনি পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমীতে ‘গ্রাজুয়েট কোর্স’ এ যোগ দেন। ১৯৬০ সালের অক্টোবর মাসে সেকেন্ড লেফট্যানেন্ট হিসেবে কমিশন লাভ করেন। কশিমন প্রাপ্তির পর তিনি যশোর, ঢাকা ও চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টে কর্মরত ছিলেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় আসামী হিসেবে ১৯৬৮ সালেই তাকে বন্দী অবস্থায় ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে আসা হয়। তীব্র গণআন্দোলনের মুখে ১৯৬৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মামলা থেকে নিঃশর্ত মুক্তি পান তিনি। কিন্তু তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়।

১৯৭১ সালে তিনি ব্যবসা করতেন। ২৫ মার্চ ঢাকায় ছিলেন। ২৭ মার্চ ঢাকা থেকে পালিয়ে নিজ এলাকায় গিয়ে যুদ্ধে যোগ দেন। নূরুজ্জামানকে পুনরায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পর্যায়ক্রমে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদে উন্নীত হন। মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে তাকে নবগঠিত জাতীয় রক্ষীবাহিনীর পরিচালক নিযুক্ত করা হয়। ১৯৭৫ সালের শেষ দিকে সরকার এ বাহিনী বিলুপ্ত করে। ১৯৭৫ সালের পট পরিবর্তনের পর তার চাকরি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যস্ত করা হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকরিকালীন তিনি অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইন, সেনেগাল, কানাডা ও সুইডেনে কর্মরত ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর ঢাকা থেকে অসংখ্য বাঙালি ইপিআর-আনসার-পুলিশ নরসিংদী জেলায় যান। এ এন এম নূরুজ্জামান নরসিংদীতে তাদের একাংশকে সংগঠিত করে কয়েক স্থানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধ করেন। এসব যুদ্ধে তিনি নেতৃত্ব দেন। ১৪-১৫ এপ্রিল নরসিংদীর পতন হয়। এরপর তিনি ভারতে যান। ১৭ এপ্রিল বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয় এবং ক্রমে মুক্তিযুদ্ধের জন্য সাংগঠনিক কাঠামো গড়ে উঠতে থাকে। মুক্তিবাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামো গড়ে ওঠার পর ৩ নম্বর সেক্টরের সহকারী সেক্টর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পান এ এন এম নূরুজ্জামান। সেক্টর কমান্ডার মেজর কে এম শফিউল্লাহ (বীর উত্তম, পরে সেনাপ্রধান ও মেজর জেনারেল) আগস্ট মাসে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর জন্য একটি ব্রিগেড গঠনের দায়িত্ব পান। তখন এ এন এম নূরুজ্জামান ৩ নম্বর সেক্টরের সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্ব পান। তিনি অত্যন্ত দক্ষতা, বিচক্ষণতা ও সাহসিকতার সঙ্গে এ দায়িত্ব পালন করেন। তিন নম্বর সেক্টরের আওতাধীন এলাকা ছিল হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুর জেলা এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নারায়ণগঞ্জ জেলার অংশবিশেষ এলাকা। এ এন এম নূরুজ্জামানের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ পরিচালনায় ৩ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অসংখ্য অপারেশন করেন। তার সার্বিক নেতৃত্বে বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি সরাসরি যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এর মধ্যে আখাউড়ার যুদ্ধ অন্যতম। মুক্তিযুদ্ধকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেটের মধ্যে রেল যোগাযোগের জন্য আখাউড়া রেলজংশন ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর অবস্থান ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে তিন কিলোমিটার দূরে। ওপারে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলা। আখাউড়া থেকে আগরতলা সড়কপথে সংযুক্ত। আখাউড়ার বিভিন্ন স্থানে ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থান। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে মুক্তি ও মিত্র বাহিনী যৌথভাবে সেখানে আক্রমণ করে। কয়েক দিন ধরে সেখানে যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে এ এন এম নূরুজ্জামানের নেতৃত্বে তিন নম্বর সেক্টরের এক দল মুক্তিযোদ্ধা অংশ নেন। নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর এস ফোর্সের একদল (১১ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট) মুক্তিযোদ্ধা আখাউড়ার উত্তর দিকে ব্লকিং পজিশন তৈরি করেন। এর ফলে সীমান্তসংলগ্ন সড়ক ও রেলপথ পাকিস্তানিদের জন্য রুদ্ধ হয়ে যায়। এস ফোর্সের আরেক দল (দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট) মুক্তিযোদ্ধা একই দিক থেকে আক্রমণ পরিচালনা করেন। এ এন এম নূরুজ্জামানের নেতৃত্বে ৩ নম্বর সেক্টরের এক দল মুক্তিযোদ্ধা আগরতলা এয়ারফিল্ডের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থান নিয়ে পাকিস্তানিদের ওপর আক্রমণ চালান। ৩০ নভেম্বর থেকে ৫ ডিসেম্বর সকাল পর্যন্ত আখাউড়ায় ভয়াবহ যুদ্ধ চলে। দুপুরে আখাউড়া মুক্ত হয়।[৪] এ.এন.এম. নূরুজ্জামান বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি সক্রিয়াভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং ৩নং সেক্টরে সেক্টর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তিনি বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত হন।

মৃত্যু
সুইডেনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে কর্মরত অবস্থায় ১৯৯৩ সালের ১৬ মার্চ স্টকহোমে তিনি পরলোক গমন করেন। তাকে ঢাকার সামরিক কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।

পুরস্কার ও সম্মাননা
বীর উত্তম
ঢাকা সিটি কর্পোরেশন তার নামে ঢাকার একটি সড়কের নামকরণ করেছে বীরউত্তম এ.এন.এম.নূরুজ্জামান সড়ক।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ ক্যাটাগরির আরো নিউজ

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
© All rights reserved © 2023 Narsingdinews24.com
ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট : উইন্সার বাংলাদেশ