মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম (জন্ম: ৩ আগস্ট ১৯৫১) – বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের জন্ম নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার ডৌকার চর গ্রামে। তার বাবার নাম ডাঃ আবদুল হাকিম ভূঁইয়া এবং মায়ের নাম বেগম আকতারুন নেছা। তার স্ত্রীর নাম ফারজানা নজরুল। তাঁদের এক ছেলে, এক মেয়ে। তিনি পি.এ.এফ কলেজ, পাকিস্তান থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন এবং ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজেও অধ্যয়ন করেন।
কর্মজীবন
মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। প্রতিরোধ যুদ্ধ শেষে ভারতে যান। পরে তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় প্রথম বাংলাদেশ ওয়ার ফোর্সে। প্রশিক্ষণ শেষে অক্টোবর মাসের প্রথমার্ধে আবার যুদ্ধে যোগ দেন। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতেই থেকে যান। লেফটেন্ট্যান্ট কর্নেল হিসেবে অবসর নেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীকে প্রথম বারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ২৯/১২/২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে। ০৩/০৩/২০১৪ খ্রিঃ তারিখে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়ে অদ্যাবধি কর্মরত রয়েছেন।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার শাহবাজপুরে একটি যুদ্ধে এগিয়ে যাচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধারা। এর মধ্যে (চার্লি [সি] কোম্পানি) নেতৃত্বে মো. নজরুল ইসলাম ভূঁইয়া। তাঁদের লক্ষ্য, কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শাহবাজপুর তিতাস সেতু অনতিবিলম্বে দখল করা। মুক্তিযোদ্ধা সব মিলে এক ব্যাটালিয়ন শক্তি। অধিনায়ক ক্যাপ্টেন এ এস এম নাসিম (বীর বিক্রম)। অগ্রাভিযানে মো. নজরুল ইসলাম ভূঁইয়া তার দল নিয়ে একদম সামনে। তাঁদের অনুসরণ করছে আরও দুটি দল—আলফা ও ডেলটা কোম্পানি। দুই দলের মধ্যে কিছুটা দূরত্ব বিদ্যমান। এই অভিযানে আছেন ‘এস’ ফোর্সের অধিনায়ক মেজর কে এম শফিউল্লাহ (বীর উত্তম) জেও। তার সঙ্গে আছে ক্ষুদ্র একটি দল। তিনি যখন শাহবাজপুরের অদূরে ইসলামপুরে পৌঁছালেন, তখন একটি দুর্ঘটনা ঘটে গেল। হঠাৎ সেখানে হাজির হলো পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দুটি মিলিটারি ট্রাক। তাতে ৩০ ফ্রন্টিয়ার ফোর্সের ১৫-১৬ জন সেনা। মো. নজরুল ইসলাম ভূঁইয়া তখন তার দল নিয়ে কিছুটা সামনে। ইসলামপুরে পাকিস্তানি সেনাদের উপস্থিতি ছিল একেবারে আশাতীত। কারণ, একদম পেছনে আরেকটি দল (ব্রাভো [বি] কোম্পানি) নিয়ে ছিলেন ক্যাপ্টেন সুবিদ আলী ভূঁইয়া । তাঁদের ওপর দায়িত্ব, শত্রু পাকিস্তানি সেনারা যেন পেছন থেকে অগ্রসরমাণ মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ না করতে পারে। কে এম শফিউল্লাহ তাৎক্ষণিক পাকিস্তানি সেনাদের আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিলেন। কিন্তু তারা হাত উঁচু করে ট্রাক থেকে নেমেই গুলি শুরু করে। এক পাকিস্তানি সেনা তার ওপর চড়াও হয় এবং অগ্রসরমাণ নজরুল ইসলাম ভূঁইয়ার দলের ওপর আক্রমণ চালায়। এমন সময় সেখানে বাসে করে হাজির হলো আরও কিছু পাকিস্তানি সেনা। তখন তুমুল লড়াই শুরু হয়ে গেল। ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক এ এস এম নাসিম গুরুতর আহত হলেন। আক্রমণের তীব্রতায় মুক্তিযোদ্ধারা কিছুটা বিশৃঙ্খল। তার দলের চারটি প্লাটুনের মধ্যে অক্ষত শুধু একটি প্লাটুন। অন্যদিকে দুই অধিনায়ক পাকিস্তানি সেনাদের ঘেরাওয়ের মধ্যে। তারা জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। চরম বিপর্যয়কর অবস্থা। মো. নজরুল ইসলাম ভূঁইয়া বিচলিত হলেন না। মাথা ঠান্ডা রেখে ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে সতর্কতার সঙ্গে পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন। অক্ষত প্লাটুন নিয়ে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েন পাকিস্তানি সেনাদের ওপর। তার সাহসিকতায় উজ্জীবিত হলেন সহযোদ্ধারা। শেষ পর্যন্ত প্রবল যুদ্ধের পর পর্যুদস্ত হয় সব পাকিস্তানি সেনা। সেদিন মো. নজরুল ইসলামের সাহসিকতা ও বীরত্বে কে এম শফিউল্লাহ, এ এস এম নাসিমসহ অনেকের জীবন বেঁচে যায়। যুদ্ধে ২৫ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত ও ১৪ জন বন্দী হয়। মুক্তিবাহিনীর দুজন শহীদ ও ১১ জন আহত হন।
পুরস্কার ও সম্মাননা
বীর প্রতীক